বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ।Objectivity in Journalism

বস্তুনিষ্ঠ
সাংবাদিকতা Objectivity

কোন  ঘটনা যেভাবে ঘটেছে হুবহু সেভাবে উপস্থাপন করে সংবাদ লিখাকে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা বা  Objectivity বলে।

আমরা যখন কোন একটি ঘটনা দেখি বা শুনি তখন আমরা আমাদের আদর্শ , মুল্যবোধ ,বিবেক ইত্যাদি দিয়ে ঘটনাটি বিচার করি। এবং কাউকে বলার সময় আমাদের খারাপ লাগা বা ভাল লাগার দিকে ইংগিত করেই ঘটনাটি বলি।

কিন্তু, কোন সাংবাদিক যখন একটি ঘটনা দেখেন বা সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন , তখন ঘটনাটিকে তার আদর্শ , মুল্যবোধ, বিবেক ইত্যাদি দিয়ে বিচার করার কোন সুযোগ নেই। কেননা, তিনি কেবল ঘটনাটি কিরকম ছিল, কী ঘটেছিল তাই তার পাঠকের নিকট তুলে ধরতে পারবেন। এর বেশি কিছুই তিনি বলতে পারবেন না।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

সাংবাদিকতা জন্মলগ্ন থেকেই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রয়োজন দেখা দেয়। উপমহাদেশের প্রথম প্রধান পত্রিকা বেংগল  গেজেটে,জেমস অগাস্টাস হিকি, লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস এর পত্নী লেডি হেস্টিংস কে নিয়ে ব্যঙ্গ  করে পত্রিকায় প্রকাশ করতেন।

পরবর্তীতে প্রকাশিত বহু পত্রিকায় লক্ষ্য করা যায়, পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর উদ্দেশ্য তারা বিভিন্ন ধরনের চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশ করতেন। এতে পাঠক বিভ্রান্ত হত। সংবাদ তার বস্তুনিষ্ঠতা হারাতে থাকে।

পরবর্তীতে ইয়োলৌ জার্নালিজম (Yollow Journalism) এর ধারনার সূত্রপাত হয়।

বলা হয়ে থাকে যে, একজন সাংবাদিক সারাদিন বিভিন্ন উপকরন সংগ্রহ করে আনেন। এবং সন্ধ্যায় অফিসে এসে সেগুলো লিখেন। পরে বিভিন্ন কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে সেটি রান্না করে পাঠকের জন্য তাজা উপস্থাপন করা হয় সংবাদপত্রের পাতায়।

কিন্তু , এখানে সাংবাদিকের মশলা মাখানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি কেবল যে কাঁচা উপকরণ এনেছেন ঘটনাস্থল থেকে তা গুরুত্ব অনুসারে সাজিয়ে লিখবেন। এছাড়া ঘটনাকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার তিনি কেউ নন।

সম্ভাব্য কারণ

বিভিন্ন কারণে সংবাদ তার বস্তুনিষ্ঠতা হারায়। এখানে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হল।

ব্যক্তিস্বার্থ

অনেক সময় ব্যক্তিস্বার্থের জের ধরে কিছু কিছু সাংবাদিক অনেক মিথ্যা ,বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ,প্রচার করেন, যা তার পাঠক ,শ্রোতাকে বিভ্রান্ত করে। সাংবাদিক হিসেবে তার মূল্যবোধকে খর্ব করে। পাঠক, শ্রোতাকে আস্থাহীন করে তোলে। সর্বোপরি, সংবাদ তার বস্থুনিষ্ঠতা হারায়।

পত্রিকার নীতি

প্রতিটি পত্রিকার নিজস্ব কিছু নীতি থাকে। অনেক সময় এমন অনেক ঘটনা ঘটে , যেগুলো ঠিক সেভাবে ছাপানো যায় না। কেননা , তা পত্রিকার নীতির পরিপন্থী। সেসকল ক্ষেত্রে সম্পাদনার সময় পত্রিকার নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেগুলো সম্পাদনা করে ছাপানো হয়। এতে পত্রিকার নীতি রক্ষা পেলেও বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না।

কাটতি

পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য অনেক সংবাদপত্র চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। অনেক সময় সেগুলো ভিত্তিহীন হয়ে থাকে।

মন্ময় সাংবাদিকতা

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার বিপরীত হল মন্ময় সাংবাদিকতা বা Subjectivity

মন্ময় বলতে বোঝায় নিজের খেয়াল খুশিমত। অর্থাৎ, সংবাদের সাথে নিজের খেয়াল খুশি মত মশলা মিশিয়ে স্পাইসি করে তোলা।  

বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা

একজন সাংবাদিক তার পাঠকের নিকট সত্য ঘটনা তুলে ধরতে দায়বদ্ধ। কেননা , তার পাঠক তাকে বিশ্বাস করেন, ভরসা করেন। ফলে তিনি যা লিখবেন বা বলবেন, পাঠক বা শ্রোতা তাই বিশ্বাস করবেন।

সাংবাদিক যদি ঘটনাকে বিচার করতে যান, তবে ঘটনাটি পরিবর্তন তথা বিকৃত হবার আশংকা থাকে। এজন্য একজন সাংবাদিককে সচেতন থাকতে হবে, যেন সত্য ঘটনাটির সাথে তিনি তার আবেগ বা চিন্তা গুলিয়ে না ফেলেন।

কোন কোন সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় সাংবাদিককে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার প্রাণের জন্যেও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এমন অনেক সাংবাদিক আছেন, যারা তাদের প্রাণের ঝুকি নিয়েও আমাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপন করেন।

এত কিছুর পরও সবসময় বস্তুনিষ্টতা রক্ষা করা সম্ভব হয়না।

No comments

Featured Post

এক্সপোজার (Exposure) কি?

এক্সপোজার (Exposure) আমরা জেনেছি ক্যামেরার ফিল্ম   বা   সেন্সর যখন আলোতে exposed হয় , অর্থাৎ আলোর সংস্পর্শে আসে তখন ফিল্ম / সে...

Powered by Blogger.